আমরা রাস্তায় চলতে ফিরতে যেসব গাড়ি দেখি, বেশিরভাগই প্রায় একই রকমের, আকারের, ভিন্নতা বলতে শুধু রঙেই, খুব কমই এমন গাড়ি চলতে দেখা যায় যা আলাদাভাবে আমাদের নজর কাড়তে সক্ষম হয়।


সুতরাং অর্থটা এমন দাড়াচ্ছে যে, আপনি যদি নজর কাড়তে চান, আপনার অর্থনৈতিক সামর্থ্য কিংবা নিজ ব্যাক্তিত্ব লোকের নজরে আনতে চান, তাহলে আপনার অবশ্যই এমন কিছু থাকতে হবে যা অতুলনীয় এবং উদ্ভট রকমের অদ্ভুতুড়ে।


আজকের আর্টিকেলটিও সাজানো হয়েছে এমন সব ডিজাইনের গাড়ি দিয়ে যা সচরাচর রাস্তায় দেখা যায় না তবে দেখলে ভড়কে যাওয়া নিশ্চিত,


মেসার্চমিট কেআর২০০ (Messerschmitt KR200)
গত শতাব্দীর পঞ্চাশ দশকের মাঝামাঝি সময়ে নির্মিত সরু গাড়িটি জার্মানীতে কেবিন স্কুটার হিসেবে পরিচিত ছিল।

মেসার্চমিট কেআর২০০ ; Image Source: mad4wheels.com




ওই সময়ে গাড়িটির প্রধান প্রতিবন্ধকতা ছিল এর ১৯১ সিসি ইন্জিন যখন অদ্ভুত আকারের গাড়িটির ওজন ছিল ৫০০এলবিএস।


স্টাউট স্কারব (Stout Scarab)
ফোর্ড মোটরসের একজন সাবেক এক্সিকিউটিভ উইলিয়াম স্টাউট ১৯৩০ সালে গাড়িটি প্রথম নির্মান করেন।

স্টাউট স্কারব ; Image Source: mycarquest.com
পরবর্তীতে চল্লিশ দশকের প্রথম দিকে, আমেরিকান অটোমোটিভ ইন্জিনিয়ারিং নামের প্রতিষ্ঠান স্টাউট স্কারব প্রথম বাজারজাত শুরু করে৷ শুধু ডিজাইন না, আবিষ্কারের দিক থেকে দেখলেও স্টাউট স্টারব প্রথম গাড়ি হিসেবে চারকোণেই স্বাধীন কয়েল স্প্রিং সাসপেনশন ব্যবহার করে।
বিএমডব্লিউ ইসেট্টা (BMW Isetta)
মূলত ইটালিতে এস.পি.এ (S.p.A) দ্বারা নির্মিত গাড়িটি সিঙ্গেল সিলিন্ডার মাইক্রো কার।

বিএমডব্লিউ ইসেট্টা ; Image Source: bright-cars.com
এছাড়া ব্রাজিল, জার্মানী, ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ডে ভিন্নভাবে নির্মাণ ও বাজারজাত করা হলেও এস.পি.এ র নির্মিত বিএমডব্লিউ ইসোট্টা নামের ছোট অথচ দারুণ দেখতে গাড়িটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায় তখনকার তারুণ্যের কাছে৷
নির্মাণের ছয় বছরে মধ্যে এক লক্ষ ষাট হাজার বিএমডব্লিউ ইসেট্টা গাড়ি বিক্রি করে ইটালির কোম্পানিটি।
ডেভিস ডিভান (Devis Divan)
তিন চাকার এই গাড়িটি ১৯৪০ সালে লস এন্জেলসের ডেভিস মোটরস কোম্পানি প্রথম বাজারজাত করতে শুরু করে৷

ডেভিস ডিভান ; Image Source: petrolicious.com
ডেভিস মোটরস কোম্পানি তেরটি গাড়ি বাজারে এনেছিল, মাত্র এক বছর স্থায়ী হয়েছিল কোম্পানিটি ধ্বংস হওয়ার আগে।
গ্লেন ডেভিস নামের মেধাবী এক ডিজাইনার ছিলেন গাড়িটি নকশার নেপথ্যে। কোম্পানি ধ্বংস হওয়ার আগে, শুধু এই গাড়িটির জন্যই তিনশত প্রিঅর্ডার পেয়েছিল ডেভিস মোটরস, যার তৎকালীন বাজারমূল্য ১,৫০০,০০০ ডলার।
হেইংকেল কেবিন (Heinkel Kabine)
১৯৫৬ এবং ১৯৫৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে জার্মান এয়ারক্রাফট নির্মাতা কোম্পানি হেইংকেল গাড়িটি নির্মাণ করে।

হেইংকেল কেবিন ; Image Source: wheelsage.com
চার স্ট্রোক ইন্জিন এবং একটি মাত্র দরজা সমৃদ্ধ গাড়িটি দেখলে বুঝে যাবেন এয়ারক্রাফট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান গাড়ি বানালে কতটা উদ্ভট হতে পারে।
পেল পি৫০ (Peel P50)
উল্টোদিকে ঘোরার মত পর্যাপ্ত কৌশলগত ক্ষমতা না থাকা এবং ড্রাইভারের গাড়িটি মেনুয়ালি নিয়ন্ত্রণ করার পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত হলে গাড়ির ভেতরের অল্প জায়গা না দেখেও বলা যায় গাড়িটি কেবল একজনের জন্যই। মাইক্রোকার গুলোর মধ্যে সবচেয়ে ছোট আকারের গাড়ি পেল পি৫০।

পেল পি৫০ ; Image Source: garage-little.com
ধারণা করা হয় মাত্র ২৭ টি গাড়িই কোম্পানিটি বানায়, এই ২৭ টিই আদি এবং আসল। মহৎ উদ্দেশ্যে নিলামে বিক্রি হওয়ায় প্রতিটি গাড়ির দাম ছয় অংক অতিক্রম করেছিল।
ইটিভি – ইলেট্রিক সুপার কার (ETV – Electric Super Car)
মিকো এফআই এর প্রখ্যাত উদ্যোক্তা মাইক ভেটার চমৎকার গাড়িটি ডিজাইন করেন।

ইটিভি – ইলেকট্রিক সুপার কার ; Image Source: byffer.blogspot.com
এই অতুলনীয় কিট এক্সট্রা টেরেস্ট্রিয়াল ভিহিকলটি (ETV) একাধারে প্রচুর মুগ্ধ ভক্ত এবং একইসাথে প্রচুর নিন্দুকেরও জন্ম দেয়।
কিট কারটি চোখে লাগার এবং মনে রাখার মত ছিল প্রথম দিন থেকেই, আমাদের লিস্টে না আসারও তাই কোন কারণ ছিল না।
এম্ফিকার মডেল ৭৭০ (Amphicar Model 770)
গাড়িটির ডিজাইন এবং নির্মাণে এতো বেশি সৃষ্টিশীল ছিল নির্মাতা যে একে বলা যেতে পারে সময়ের চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকা গাড়ি৷ এম্ফিকার মডেল ৭৭০ মূলত সৃষ্টিশীলতার দারুণ এক ছবি এঁকেছিল অটো ইন্ডাস্ট্রিতে।

এম্ফিকার মডেল ৭৭০ ; Image Source: unusual-cars.com
সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে তালিকার এই গাড়িটি পানিতে চলতে পারে, হ্যাঁ জনাব, ঠিকই পড়েছেন, একদম আসল পানিতেই চলতে পারে।
ট্রামোন্টানা আর (Tramontana R)
যে কোন সুপার স্পোর্ট কারের মতই, এই গাড়িটিও ডিজাইন করা হয়েছে এমনভাবে যেন শুধু রেসিং নয়, ব্যবহার করা যায় প্রতিদিনই রাস্তায়৷

ট্রামোন্টানা আর ; Image Source: drive-hard.com
তবে গাড়িটি কিনতে আপনাকে শুধু বড়মাপের ধনী হলেই চলবে না, থাকতে হবে কিছুটা ভাগ্যও।
কারণ প্রতিবছর মাত্র ১২ টি গাড়ি প্রস্তুত করা হয় বিক্রির জন্য, নিলামে বিক্রি হওয়া এসব গাড়ির বেস প্রাইস শুরু হয় অর্ধ মিলিয়ন ডলার থেকে।
ফ্যান্টম করসার (Phantom Corsair)
ফ্যান্টম করসার আসলে শুধু চমৎকার একটি গাড়িই নয়, হেইন্জ ফুড প্রসেসিং কোম্পানির উত্তরাধিকারী রাস্ট হেইন্জের মেধাবী প্রতিভারও চিত্রায়ন করে৷

ফ্যান্টম করসার ; Image Source: remarkablecars.com
একুশ শতকরের গাড়িগুলোর মত দেখতে হলেও গাড়িটির আসল পরিকল্পনা এবং আদিরূপ গত শতাব্দীর প্রথমে করা।
ডিজাইনারের লক্ষ্যই ছিল এমন কিছু তৈরী করা যা হবে অতুলনীয়, যা আগে কেউ কখনো দেখেনি। তবে দূর্ভাগ্যবশতঃ রাস্ট হেইন্জ ১৯৩৯ সালে মারা যান গাড়িটির বিপুল সংখ্যক বিক্রি এবং জনপ্রিয়তা দেখার আগেই।
ড্রিম কার ১২৩ঃ পিরামিড বৈদ্যুতিক গাড়ি (Dream Car: The Pyramid Electric Car)
আট হাজার পাউন্ড ওজনের মিশরীয় পিরামিড আকৃতির গাড়িটি সাড়ে তিন ঘন্টার বৈদ্যুতিক চার্জে ২৪০ মাইল পর্যন্ত চলতে পারে প্রতি ঘন্টায় ৪০ মাইল বেগে৷

ড্রিম কার ১২৩ ; Image Source: zapcar.ru
গ্রেগ জেনিস, দ্য ড্রিম কার ১২৩ এর আবিষ্কারক গাড়িটির জন্য একটি টাওয়ার গ্যারেজও নির্মাণ করেছেন যেখানে সৌরবিদ্যুৎ এবং বায়ু শক্তি ব্যবহার করা হয় গাড়িটিকে রিচার্জ করতে৷
মেট্র্যাক ট্রাকঃ দ্য স্কিইং কার (Mattrack Truck: The Skiing Car)
গাড়িটি প্রমাণ ডিজাইনের অন্যান্য যে কোন গাড়ির মতই, তবে পার্থক্য শুধু এর চাকাতে, যা মেট্র্যাক বেল্ট দ্বারা স্থানান্তরিত করা হয়েছে৷ মেট্র্যাক কোম্পানি এই স্থানান্তরের কাজটি করেছে।

মেট্র্যাক ট্রাক ; Image Source: mattracks.com
কোম্পানিটি যে কোন চার চাকার গাড়ির ক্ষেত্রেই এ কাজটি করে দিতে পারে তা সে যে আকার বা ওজনেরই হোক না কেন।
ছোট আকৃতির এই মেট্র্যাক বেল্টের ফলে গাড়িটি নিয়ে আপনি যে কোন জায়গায়ই যেতে পারবেন, তবে কোথাও যদি তুষার বরফ খুব বেশি নরম এবং গভীর হয়, সে ক্ষেত্রে আরো লম্বা আকৃতির মেট্র্যাক বেল্ট ব্যবহার করতে হবে।
প্যজেওট ক্যাপসুল (Peugeot Capsule)
দ্য এএলপি জার্মানার প্রথমবারের মত একটি এসকেপ পড ডিজাইন করেছে যা আপনাকে রাস্তা ছাড়াও অন্যান্য জায়গায় চলার স্বাধীনতা দেবে৷

প্যাজেওট ক্যাপসুল ; Image Source: 4x4magazine.blogspot.com
একজনের সিটওয়ালা অফ রোড ইলেক্ট্রনিক গাড়িটি কেএলআর ৬৫০(KLR 650) থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ডিজাইন করা হয়েছে। জিপিএস, এলসিডি স্ক্রিন যা রেয়ার ভিউ মিররকে দ্বিগুণ করেছে এবং সম্পূর্ণ ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবস্থা তো রয়েছেই৷
ছোট্ট গাড়িটিতে লাগেজ রাখার জন্যও আলাদা জায়গা আছে যদি আপনি সপ্তাহান্তে কোথাও থেকে ঘুরে আসতে চান।
প্রতিদিন কর্মস্থল কিংবা আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পৌছতে যানবাহনের প্রয়োজন তো রয়েছেই, প্রতিদিনের একঘেয়ে জীবন থেকে মুক্তি পেতে ছুটির দিনগুলোতে অন্য কোথাও ঘুরে এসে মনটাকে চাঙা করে নেয়াও খুবই জরুরী।
প্রতিদিন চলাচল করা যানবাহনের বদলে ছুটির দিনে সময়ের স্বাদ বদলে নেয়ার যাত্রায় যদি চলাচলও একটু ভিন্নভাবে, ভিন্ন কিছুতে সম্ভব হয়, তাহলেই বা মন্দ কী!











