ডিজিটাল হেলথের ক্ষেত্রে সিলিকন ভ্যালির মাইন্ড স্ট্রং বেশ ভালো কাজ করছে। বিশেষ করে, তাদের অ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের মানসিক অবস্থা বোঝার ব্যাপারটি তাক লাগিয়ে দিয়েছিল সবাইকেই। এটি মূলত, একজন মানুষ কত দ্রূত স্মার্টফোন স্ক্রল করছেন বা তার আঙ্গুল কীভাবে কাজ করছে – এই সমস্ত তথ্য নিয়ে সেই ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করে।


গতবছর শুরু হওয়ার পর থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার প্রায় ডজনখানিকের বেশি দেশ নিজেদের রোগীদের জন্য এই অ্যাপ ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু আদৌ কি এই অ্যাপ ঠিকভাবে কাজ করছে? করলেও সেটা কতটা সঠিক?



এখনো পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরীণ কর্মীরা ছাড়া এই তথ্য কেউ জানেন না। এমনকি অ্যাপটি ঠিক কীভাবে নির্ভুল ফলাফল দিচ্ছে সেটাও জানা যায়নি এখনো। অনেকেই তাই এখনো অ্যাপ ব্যবহার করবেন কিনা তা নিয়ে সন্দেহে ভুগছেন।


আমি আমার টাকা আর সময় ততক্ষণ এমন কিছুর পেছনে ব্যয় করবো না যতক্ষণ না তারা নিশ্চিত করে বলতে পারবে যে, তারা যেমন আশা করেছিল তেমন ফলাফলই এই অ্যাপ থেকে পাচ্ছে।
রোজালিন পিকার্ড, গবেষক, এমআইটি মিডিয়া ল্যাব
রোজালিন পিকার্ড, গবেষক, এমআইটি মিডিয়া ল্যাব
মাইন্ডস্ট্রং কী? কখনো ভেবেছেন এ ব্যাপারে? প্রতিষ্ঠানটি নিজেও এখনো নিশ্চিত নয় নিজেদের প্রাপ্ত ফলাফল সম্পর্কে। প্রতিষ্ঠানের এক্সিকিউটিভ ডক্টর টম ইনজেল স্বীকার করেন যে, পরিসংখ্যানের দিক দিয়ে অ্যাপটি এখনো স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। তবে হতাশার ব্যাপারেই এটি বেশ ভালো কাজ করে এটি, এমনটাও দাবী করেন তিনি।

তবে ডিজিটাল দুনিয়ায় স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করছে এমন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাইন্ডস্ট্রং একা নয়। আরো অনেক প্রতিষ্ঠানই এভাবে একজন মানুষের শারীরিক ও মানসিক অবস্থাকে প্রযুক্তির মাধ্যমে নির্ণয় করার চেষ্টা করছে। মানুষ কীভাবে দৌড়াচ্ছে, কীভাবে নিঃশ্বাস নিচ্ছে, কতটা দ্রুত লিখছে – এমন ব্যাপারগুলোকে দেখে তারপর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে অ্যাপ। আর এজন্য চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাহায্যও নিচ্ছে অ্যাপ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। আর এর ফলাফলটাও খারাপ না।




উদাহরণস্বরূপ, মাইন্ডস্ট্রং খুব দ্রুত এক বছরের মধ্যেই খুব ভালো অবস্থানে চলে এসেছে। হতাশার চিকিৎসা থেকে শুরু করে নানা ব্যাপারে আরো বেশি উন্নত কিছু করার চেষ্টা করছে তারা। এখানে তারা স্বাভাবিক গতি নির্ধারণ করার চেষ্টা করছে। যাতে অস্বাভাবিক কোনটি সেটা খুঁজে পাওয়া সহজ হয়। তবে ডাটা সায়েন্টিস্ট ডাগামের মতে, এই অ্যাপ সব ডিজঅর্ডার চিহ্নিত করতে পারে। তবে মাইন্ডস্ট্রং এর এই অ্যাপের সবচাইতে মজার দিকটি হলো, এটি কোনো মানুষের মানসিক অবস্থা এক সপ্তাহ পরে কেমন থাকবে সেটিও বলে দিতে পারে।


ব্যাপারটি অনেকটা আবহাওয়া সম্পর্কে আন্দাজ করার মতো। খুব দ্রুতই এই তথ্যগুলো সবার সামনে প্রকাশ করা হবে বলে জানান ইনজেল। হ্যামিলটন স্কেলে এটি মুডের সাত রকমের পরিবর্তন নির্ণয় করতে পারে। এতে যে মানুষটি কখনো হতাশ হন না, তার সামান্য হতাশাও বুঝে ফেলা যাবে। আবার যে মানুষটি অসম্ভব বেশি পরিমাণে হতাশ হয়ে পড়েছেন তার ব্যাপারেও জানা যাবে।

তবে হ্যামিলটন স্কেল বাদে আর কোথাও এই অ্যাপের পরিসংখ্যানের সত্যতা জানা যায় না। বেশ কিছু ক্লিনিকাল ট্রায়ালের মধ্য দিয়ে গেলেও তার ফলাফল এখনো প্রকাশ করা হয়নি। তাই ঠিক কতটা সুবিধাজনক এই অ্যাপটি, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। এখনো পর্যন্ত ব্যাপারটি নিয়ে কেউ খুব একটা মাথা ঘামাচ্ছে না। তবে ভবিষ্যতে আরো এগিয়ে যাবে অ্যাপটি। সেক্ষেত্রে এই সংক্রান্ত নানারকম তথ্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে।
এমআইটির আরেক কর্মী পিকার্ডের মতে, শুধু স্মার্টফোন কে কীভাবে চালাচ্ছে তার উপরে নির্ভর করে এমন কোনো সিদ্ধান্ত আসাটা যথেষ্ট নয়। তার নিজের গবেষণায় পিকার্ড ব্যক্তির ত্বকের তাপমাত্রা, কার্যকলাপ এবং কতটা সময় সে ফোন ব্যবহার করছেন – এই সবকিছু ব্যবহার করেছেন। আর এর ফলাফল ৮০ শতাংশ ঠিক। তবে সবকিছু মিলিয়েও যে এই স্নায়ুসংক্রান্ত পরীক্ষাগুলোর ফলাফল পুরোপুরি ঠিক হয় না, কথাটি পুরোপুরি ভুল নয়।

কম্পিউটারের সাহায্যে এই পরীক্ষা চালানো হয় বেশ কয়েকজন হতাশ ব্যক্তির উপরে। তারা হতাশার জন্য চিকিৎসা নিচ্ছিলেন সেসময়। কম্পিউটার মোট ৪৪ শতাংশ বার সঠিক ফলাফল দেখাতে সক্ষম হয় এক্ষেত্রে। তবে এই পদ্ধতি যে খুব একটা কার্যকর নয় সেটা নিয়ে চিকিৎসকেরা নিশ্চিত। কারণ এটি এমন একটি ব্যাপার যেখানে দূর থেকে বোঝা যম্ভব না কোনো ব্যক্তি আসলেই মানসিকভাবে অসুস্থ কিনা।
আর কেন তিনি মানসিক সমস্যায় ভুগছেন সেটাও ঠিক করে চিহ্নিত করাটা সম্ভব হয় না। মানসিক সমস্যা ছাড়াও অন্যান্য কারণেও কোনো ব্যক্তি ঠিক একই আচরণ করতে পারেন। কারণ মাদক সেবন, অসুস্থতা, দুর্ঘটনা, খাবার-দাবার, বা না ঘুমানো – এমন অনেক কারণ থাকতে পারে এর পেছনে। ইনজেল সেটা স্বীকার করেছেন। আর এই ব্যাপারে তারা কাজ করছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

ইনজেল এবং মাইন্ডস্ট্রং -এর সাথে জড়িতরা এই অ্যাপটিকে ‘স্মোকিং ডিটেক্টর’এর মতো বলে মনে করেন। যেটি ভবিষ্যতের হতে যাওয়া বিপদকে আগে থেকেই জানিয়ে দেয়। তবে সমস্যাটি হলো ধোঁয়া থাকলেই স্মোকিং ডিটেক্টর কাজ করবে এবং নির্দেশনা দেবে। এটির কাজ করার পেছনে সবসময় কারণ থাকে। মাইন্ডস্ট্রং এর অ্যাপ ঠিক ততটা কার্যকরী কিনা তা নিশ্চিত নয়। তবে আশা করা যায়, একটা সময় পর মাইন্ডস্ট্রং নিজেদের অ্যাপকে আরো বেশি উন্নত করে তুলতে সক্ষম হবে।











