গাড়ি কেনার সাথে সাথে গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে আপনাকে। শুরুতে চালাতে গিয়ে অনেক ধরনের বিড়ম্বনায় পড়তে পারেন। গাড়ির গায়ে আঁচড় লাগতে পারে। রাস্তাঘাটে অন্য কোনো গাড়ি আপনার গাড়িকে ধাক্কা দিতে পারে। সামনে আচমকা কোনো গাড়ি থেমে যেতে পারে। আপনাকে করতে হতে পারে হার্ড ব্রেক। তার উপর, গাড়ির প্রতিটা যন্ত্রাংশের দিকে খেয়াল রাখতে হবে আলাদা ভাবে।


সবচেয়ে বেশি যে ব্যাপারটা অনেকেই এড়িয়ে চলেন সেটি হলো, ফুয়েল নেভিগেটর প্রায় শূন্যের কাছাকাছি থাকা সত্ত্বেও সেই গাড়ি নিয়ে বের হয়ে পড়েন, গাড়িতে জ্বালানি না ভরেই। অনেকে এই ব্যাপারটি বেশ অবহেলার সাথে গ্রহণ করেন কিন্তু এর পরিণাম অবস্থাভেদে ভয়াবহ হতে পারে। প্রায় শূন্য জ্বালানিতে গাড়ি চালানোয় কী কী সমস্যা হতে পারে সেটির একটি তালিকা নিচে আলোচনা করা হলো। আশা করি এরপর থেকে সবাই সচেতনভাবেই গাড়ি চালাবেন।



১. যেকোনো সময় গাড়ি বন্ধ হয়ে যেতে পারে
যদি দূরবর্তী কোনো জায়গায় যাবার নিয়ত নিয়ে বের হন আর গাড়ির ফুয়েল ট্যাংক থাকে প্রায় শূন্য তাহলে আপনি যেকোনো সময় বিপদের সম্মুখীন হতে পারেন। কী ধরনের বিপদ? এমন কোনো জায়গায় গাড়ি বন্ধ হয়ে যেতে পারে যেখানে আশেপাশের কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত কোনো পাম্প নেই।


আশপাশ নির্জন থাকতে পারে। রাতের অন্ধকার হলে তো সাথে জুটবে চোর ডাকাতের উৎপাত। পরিবার পরিজন নিয়ে বের হলে নিরাপত্তার ব্যাপারটিও চিন্তা করতে হবে। তাই শহর থেকে বের হবার আগেই জ্বালানী পুরোপুরি ভরে নিয়ে বের হওয়া উচিত।

২. ঘটতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনাও
প্রায় শূন্য জ্বালানি ট্যাঙ্ক নিয়ে অনবরত চলতে থাকলে চলন্ত অবস্থায় মাঝ রাস্তায় আপনার গাড়িটি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সে অবস্থায় পেছন থেকে অনেক দ্রুত ছুটে চলা অন্য কোনো গাড়ি আছড়ে পড়তে পারে আপনার গাড়ির উপর। ঘটতে পারে মারাত্মক কোনো দুর্ঘটনা। সেটা হতে পারে অপূরণীয়।





৩. যন্ত্রাংশের রক্ষণাবেক্ষণ খরচ হবে সামর্থ্যের বাইরে
গাড়ির ফুয়েল পাম্পের কাজ হলো ফুয়েল ট্যাঙ্কে থেকে ইঞ্জিনে জ্বালানি সরবরাহ করা। এই জ্বালানি ইঞ্জিনকে যেমন ঠান্ডা রাখে তেমনি রাখে সচল। কার্বুরেটর এই ফুয়েল এর সাথে বাতাস মিশ্রিত করে নেয়। সেই মিশ্রিত উপাদান ইঞ্জিন তার কাজ সঠিকভাবে সম্পাদন করার জন্য ব্যবহার করে। কোনো কারণে এ জ্বালানি যদি সঠিক পরিমাণে না আসে তাহলে শুধু বাতাস কার্বুরেটর এর সঠিক কার্য সম্পাদনে ব্যাঘাত ঘটায়। ফলে ইঞ্জিনও তার স্বাভাবিক কাজ করতে পারে না।


জ্বালানি ছাড়া গাড়ি চালালে ফুয়েল পাম্পটি কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। যার বিনিময়ে আপনাকে পাম্পটি মেরামত করাতে হবে অথবা বিনিময়ে নতুন একটি পাম্প কিনতে হতে পারে। আর একটি পাম্পের দাম আপনার এক ট্যাঙ্ক জালানির দামের কয়েক গুণ বেশি। পাশাপাশি ইঞ্জিন তার স্বাভাবিক কাজ সঠিকভাবে করতে না পারলে আস্তে আস্তে সেটির উপরও চাপ পড়বে সঠিকভাবে চলতে না পারার।
তাই ভেবে দেখুন, এক ট্যাঙ্ক ফুয়েল কিনবেন নাকি নতুন করে পাম্প, কার্বুরেটর অথবা ইঞ্জিন কিনবেন। সিদ্ধান্ত আপনার।

৪. গাড়ির কর্মক্ষমতা কমে যাবে দিনে দিনে
আপনার অনেক শখের একটি গাড়ি যেটি দিয়ে অনায়াসে ৫-১০ বছর চালিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন কেনার সময়। সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যাবে মুহুর্তেই। বিনা জ্বালানিতে গাড়ি চালাতে গিয়ে ইঞ্জিনের কর্মদক্ষতা যেমন কমতে থাকবে তেমনি আপনার গাড়ির জীবনকালও কমতে থাকবে। যে প্ল্যান আপনি ১০ বছরের জন্য করেছিলেন সে গাড়িটি হয়তো ৬ বছরই টিকবে।

অথবা তারও অনেক কম সময়ের জন্যও হতে পারে। যদিও প্রায় শূন্য জ্বালানীতে কোম্পানি আর তাদের মডেল ভেদে একটি গাড়ি প্রায় ২৫ থেকে ৫০ মাইল যেতে পারে তারপরও পরবর্তী পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে নেভিগেটরের লাল মার্ক দেখার সাথে সাথেই গাড়িতে জ্বালানি ভরে নেয়া উচিত। কারণ বেশি দিন চালাতে হলে বেশি বেশি যত্ন নিতে হবে আপনার প্রিয় গাড়ির।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা
আগে থেকেই কিছু ব্যাপারে সতর্ক থাকলে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়িয়ে চলা যায়। তার মধ্যে কিছু ব্যাপারের তালিকা দেয়া হলো। মেনে চললে আশা করি আপনার জীবন, আপনার পরিবারের জীবন সাথে আপনার গাড়ির আয়ুষ্কাল হবে দীর্ঘস্থায়ী।
১। চেষ্টা করবেন ১/৪ ভাগ ফুয়েল সবসময় যেকোনো অবস্থায় ভরে রাখতে।
২। লং ড্রাইভের প্ল্যান থাকলে ফুয়েল ট্যাঙ্ক পুরোপুরি ভরে নিন। বলা তো যায় না, কখন জ্বালানি শেষ হয়ে যায়।
৩। আপনার গাড়ির নির্দেশক ডিসপ্লে দেখে কখনো সিদ্ধান্ত নেবেন না। মাঝে মাঝে গাড়ির নেভিগেটর আপনাকে বলতে পারে আর কত মাইল বা কিলোমিটার যেতে পারবেন। সেটা কিন্তু একটি মেশিন দিয়ে চালনা করা হয়। তাই ভুল ধারণা দেয়াটা অমূলক কিছু না। তাই নেভিগেটরের উপর ভরসা না করে নিজের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করুন।
৪। আপনার যাত্রাপথের কোথায় কোথায় ফুয়েল ষ্টেশন থাকতে পারে একটি ধারণা নিয়ে রাখুন। আপনার সেভাবে প্ল্যান করতে সুবিধা হবে।
সবশেষে, গাড়িতে আলাদা ভাবে একটি নেভিগেটর দেয়া থাকে জ্বালানি শেষ হবার আগ মূহুর্তে সতর্ক করার জন্য যাতে আপনি আপনার সুবিধা মতো কোথাও থেকে পর্যাপ্ত জ্বালানী নিয়ে আবার স্বচ্ছন্দে গাড়ি চালাতে পারেন। এটা আপনার গাড়ির আয়ুষ্কাল যেমন বাড়ায় তেমনি আপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। তাই দাগ শূন্যের কোঠায় পৌঁছানোর আগেই জ্বালানি ভরে নিন সুবিধা মতো। নিশ্চিত করুন আপনার ও আপনার পরিবারের নিরাপদ জীবন।











