বেশিরভাগ মানুষই কিশোর বয়স থেকেই একটা আকাঙ্খা নিয়ে বেড়ে ওঠে, গাড়ি অথবা মোটরসাইকেল। বিশেষত আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে মোটরবাইক যেন তারুণ্যেরই প্রতীক৷ দুই চাকার চমৎকার দ্রুতগামী এই যানটি শুধু চলাচলই নয়, হয়ে উঠেছে যেন স্বাধীনতা ও উদ্দামতার অন্য নাম৷


তবে কিছু ক্ষেত্রে মোটরবাইক শুধু যৌবনের শখ কিংবা বিলাসিতা নয়, হয়ে ওঠে নিত্যকার দরকারী পণ্যও। বিশেষত ঢাকার মতো জনবহুল শহরে, যে শহরে সিটি বাসগুলো অফিস টাইমে হয়ে ওঠে নরকের অন্য নাম।



মোটরসাইকেল যেন তারুণ্যের প্রতীক ; Image Source: motorcycle-case.blogspot.com


অথচ তরুণ যারা এখনো ছাত্র কিংবা সদ্য যোগদান করেছে কোন চাকরীতে কিংবা কোন ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার প্রচেষ্টায় সংগ্রাম করছে প্রতিদিন, তাদের কোন উপায় থাকে না, নারকীয় অভিজ্ঞতার পরও প্রতিদিন লোকাল বাসে ঝোলা ছাড়া।
গাড়ি কেনা তো এ অবস্থায় প্রায় অসম্ভবই, আর ঢাকার মতো জ্যামের নগরীতে গাড়ি খুব একটা কার্যকর উপায় বলেও মনে হচ্ছে না আজকাল। শেষ ভরসা তাই মোটরসাইকেল, তরুণদের মনের একটা অদম্য আগ্রহ তো রয়েছেই এই দ্বিচক্রযানটি নিয়ে।





গাড়ির স্বপ্ন থাকলেও তরুণ বয়সে তা বেশিই ব্যায়বহুল ; Image Source: wsupercars.com


তবে তরুণ বয়স বলেই সেখানেও রয়ে যায় একটা কিন্তু। ছাত্র অবস্থায় টিউশনি কিংবা পার্টটাইম জব অথবা নতুন যারা কোন চাকরীতে যোগদান করেছে কিংবা কোন ব্যবসা দাড় করানোর চেষ্টা করছে, তাদের সবার জন্যই এককালীন টাকা দিয়ে মোটরসাইকেল কেনাটা হয়ে যায় কষ্টসাধ্য, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অসম্ভব। অথচ তাদের সবারই কর্মক্ষেত্রের প্রয়োজনেই মোটরসাইকেল হয়ে পড়ে দরকারী।

জ্যামের নগরী ঢাকায় মোটরসাইকেল হতে পারে দারুণ সমাধান ; Image Source: dailystar.net
এমন দ্বিমুখী সমস্যার চমৎকার সমাধান হতে পারে কিস্তিতে মোটরসাইকেল কিনতে পারা। আমাদের অনেকের মনেই একটি প্রশ্ন আছে সেটা হলো, কিস্তিতে মোটরসাইকেল কিনতে চাই – কি করনীয়?
কী করণীয় তা জানার আগে মোটরসাইকেল কিস্তিতে কেনার সুবিধা এবং অসুবিধাগুলোতে একবার চোখ বুলিয়ে নিলে মন্দ হয় না।
কিস্তিতে মোটরসাইকেল কেনার অসুবিধা
- বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি ইন্টারেস্টে বাইকের মূল্য দিতে হয়।
- বাইকের কোন ক্ষতি হলে অথবা চুরি হলেও আপনাকে টাকা দিতে হবে।
- সম্পুর্ণ টাকা পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত আপনাকে মানসিক চিন্তায় থাকতে হবে।
কিস্তিতে মোটরসাইকেল কেনার সুবিধা
- যেকোন ব্র্যান্ডের বাইক কিনিতে পারবেন।
- এককালীন বেশি টাকা খরচ হবে না।
- অল্প টাকায় অত্যাধুনিক ফিচারের বাইক নিতে পারবেন।
- স্বল্প সময়ের মধ্যে পছন্দের বাইক কিনতে পারবেন।
সুবিধা অসুবিধাগুলো দেখে নিয়ে নিজের জীবনযাত্রার সাথে তুলনা করে দেখুন, কোনটি আপনার জন্য উপযোগী এবং ঠিক এই মুহূর্তেই আপনার মোটরসাইকেল কেনাটা সর্বোচ্চ জরুরী কিনা।
যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে নিচের তথ্য সমূহ আপনার জন্য নিশ্চিত উপকারী হয়ে উঠবে।
আমাদের দেশে এখন অধিকাংশ মোটরসাইকেল কোম্পানি কিস্তিতে বাইক দিচ্ছে। আপনি চাইলে আপনার প্রিয় মোটরসাইকেলটি এখন কিস্তিতে কিনে নিতে পারবেন। কিস্তিতে মোটরসাইকেল কিনতে হলে আপনাকে অবশ্যই কিছু ডকুমেন্ট জমা দিতে হবে, আজ আমরা এই সম্পর্কে আলোচনা করবো।

মোটরসাইকেল কোম্পানিগুলো দিচ্ছে কিস্তি সুবিধা ; Image Source: motorivista.com
যদিও বিভিন্ন কোম্পানির কিস্তিতে মোটরসাইকেল বিক্রির প্রক্রিয়া ভিন্ন ভিন্ন রকম কিন্তু কিছু নিয়ম সব কোম্পানির একই রকম।
বর্তমানে আমাদের দেশে ইয়ামাহা, বাজাজ, টিভিএস, হিরো, রানার ইত্যাদি কোম্পানিগুলো বাইকারদের কিস্তিতে মোটরসাইকেল কেনার সুযোগ করে দিচ্ছে। যার ফলে একজন বাইকার চাইলে খুব সহজে তার পছন্দের বাইকটিই কিনতে পারবেন বাজেটের কথা না ভেবেই।
যদিও মোটরসাইকেল ব্র্যান্ড, কোম্পানি এবং কিছু ক্ষেত্রে মডেল ভেদের কিস্তির ধরণে বিভিন্ন ধরণের ভিন্নতা থাকেই, তবুও কিছু ব্যাপার সব ক্ষেত্রে একই রকম। বেসিক এই ব্যাপার গুলো জানা থাকলে কাজটা যেমন সহজ হয়ে যায় তেমনি অনেক ধরণের ঝক্কি-ঝামেলার থেকে দূরে থাকা যায়।
চলুন দেখে নেয়া যাক কিস্তিতে মোটরসাইকেল কিনতে সম্ভাব্য প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্রের তালিকা,
ঠিকানার প্রমাণ দলিল
আপনাকে অবশ্যই একটি ঠিকানা দিতে হবে যেখানে আপনার সাথে প্রয়োজন হলে যোগাযোগ করা যাবে। আর ঠিকানাটা যে আপনারই, তার প্রমাণপত্র হিসেবে কোনও এক মাসের ইউটিলিটি বিল যেমন, বিদ্যুৎ বিল, টিএন্ডটি বিল,পানি অথবা গ্যাস বিল। (অবশ্যই শেষ তিন মাসের বিলের কাগজ হতে হবে, তার আগের কাগজ গ্রহনযোগ্য হবে না।)
পরিচয়
পরিচয়পত্র হিসেবে সবচেয়ে বেশি গ্রহনযোগ্য জাতীয় পরিচয়পত্র এবং পাসপোর্ট। কিছু ক্ষেত্রে ড্রাইভিং লাইসেন্স কিংবা পারসোনাল ট্রেড লাইসেন্স দিয়েও কাজ চালানো যায় তবে বর্তমানে সরকারী কড়াকড়ি থাকায় সব ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রায় বাধ্যতামূলকভাবেই রাখা হচ্ছে।
ব্যাঙ্কের বিবৃতি
সর্বশেষ ০৩ থেকে ০৬ মাস ব্যাংকের বিবৃতি বা কেবল সক্রিয় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অথবা বিবৃতি বাধ্যতামূলক কিংবা ব্যাংক সলভেন্সি প্রশংসাপত্রও গ্রহণযোগ্য।
কর্মচারী প্রুফ ডকুমেন্টস (ব্যবসায়ী)
আপডেট ট্রেড লাইসেন্স জমা দিতে হবে, তবে সেটা চলমান এক বছরের না হলেও চলে।
কর্মচারী প্রুফ ডকুমেন্টস
আপনি যদি চাকুরীজীবি হয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে অন্তত তিন মাসের বেতন তোলার রশিদ প্রয়োজন হবে। কিছুক্ষেত্রে আপনার ডিপার্টমেন্ট হেডের সাক্ষরিত অনুমোদন পত্রের দরকারও হতে পারে।
পেমেন্টের ধরণ
এমআইসিআর চেক বা একটি সিকিউরিটি এমআইসিআর / নন এমআইসিআর চেক (অনলাইন শাখা) প্রাপ্ত (তারিখ ব্যতীত)। নগদ ডিএস / বিকাশ / রকেট দ্বারা মাসিক Installment সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।
গ্যারান্টারের বিকল্প
দুর্বল পক্ষের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস, গ্যারান্টরকে জিজ্ঞাসা করুন, গ্যারান্টারের কাছ থেকে প্রাপ্যগুলি জিজ্ঞাসা করুন (গ্যারান্টর ফটো, এনআইডি কপি, পোস্ট তারিখের চেক সরবরাহ করবে, গ্যারান্টার এফিডেভিট ২০০ টাকার স্ট্যাম্প পেপারে লেখা থাকবে (নোটারিযুক্ত অনুলিপি)।
কোম্পানির ধরণ
লেটার হেড এবং পোস্ট তারিখের চেকের উপর গ্যারান্টর এফিডেভিট সরবরাহ করবে সংস্থা।

প্রয়োজনীয় তথ্য অনুযায়ী এগিয়ে গেলে পুরো প্রক্রিয়া হয়ে যাবে সহজ ; Image Source: daraz.com.bd
বেসিক এই ব্যাপারগুলো মাথায় রাখলে আপনি নিজে নিজেই কিস্তিতে মোটরসাইকেল কেনার প্রক্রিয়াগুলো এগিয়ে নিতে পারবেন।
তবে কিস্তিতে কিংবা নগদে যেভাবেই মোটরসাইকেল কিনুন না কেন, কিনতে যাওয়ার আগে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করুন, কারণ এখন ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই এমন কারো কাছে মোটরসাইকেল বিক্রি আইনত দন্ডনীয়। আর মোটরসাইকেল কেনার পর সেটি রেজিষ্ট্রেশন প্রক্রিয়াটিও দেখে নিতে পারেন যা আপনাকে সাহায্য করবে দালাল না ধরেই নিজে নিজেই কাজগুলো সম্পন্ন করে ফেলতে।
পড়ুন, জানুন, সরকারী অফিসে দালালদের দৌরাত্ম্যে বাঁধার দেয়াল হয়ে দাড়ান।











