শখের জিনিসের দাম যেমন বেশি, তার রক্ষণাবেক্ষণের খরচও তেমন বেশি। সেই শখের বশে কিংবা দরকারেই হোক, দৈনন্দিন চলাফেরার জন্য গাড়ি ছাড়া আমাদের বিকল্প কিছু নেই। কিন্তু কেনার পর থেকে গাড়ির প্রতিনিয়ত ছোট-বড় বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায় সেগুলোর অনেক সমস্যার সমাধানের ব্যাপারে আমরা ততটা অজ্ঞ না। তবে ইন্টারনেটের এই যুগে না জানলেও ‘গুগল’ মামাকে জিজ্ঞাসা করলে সে ঠিকই সব বের করে দিতে পারে। যাই হোক, আজকের লেখাটি হবে সেসব সাধারণ কিছু সমস্যা নিয়ে যেগুলোর সমাধান আমাদের কম-বেশি অজানা। তাহলে শুরু করা যাক।


১. ব্যাটারি

বর্তনী সংযোগ দিয়ে ব্যাটারি পরীক্ষা; Image Source: Cartoq.com


সমস্যা
দীর্ঘদিন ধরে গাড়িতে একটি ব্যাটারি ব্যবহার করার পর দেখা যায়, গাড়ি ঠিকমতো চালু হচ্ছে না অথবা ব্যাটারি থেকে তড়িৎ আদান-প্রদানে ব্যাঘাত ঘটছে অথবা গাড়ি চালু হয়েও আবার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।


সমাধান
১. চেক করুন এবং প্রয়োজন হিসাবে ব্যাটারির ইলেক্ট্রোলাইট রিফিল করুন। কারণ ইলেক্ট্রোলাইট স্তর কমে গেলে ব্যাটারির কার্যকারিতা খুব দ্রুত কমে যায়।
২. ব্যাটারি টার্মিনাল বন্ধ করে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সেগুলো কিছুদিন পর পর পরিষ্কার করে রাখা। টার্মিনালগুলো পরিষ্কার না রাখলে সেখানে লেড সালফেট জমে ব্যাটারি থেকে তড়িৎ প্রবাহে বাধাগ্রস্ত করে এবং টার্মিনালগুলো ক্ষয় করে। মেটাল ব্রাশ দিয়ে টার্মিনালগুলো সহজে পরিষ্কার করে রাখা যায়।




৩. ব্যাটারি চার্জ ধরে রাখে কিনা সেটা পরীক্ষা করার জন্য একটি ব্যাটারি টেস্টার দিয়ে পরীক্ষা করে নিতে হবে।


৪. অবস্থা যদি এমন হয় যে, ইলেক্ট্রোলাইট স্তরটি সঠিক এবং টার্মিনালগুলো পরিষ্কার থাকে, কিন্তু ব্যাটারিটি চার্জ ধারণ করতে পারছে না, তবে সীসা অক্সাইড প্লেটগুলো খুব বেশি খারাপ হয়ে গেছে অথবা অভ্যন্তরীণভাবে শর্ট হয়ে গেছে এবং ব্যাটারিটি প্রতিস্থাপন করার সময় হয়েছে।
২. রেডিয়েটর

রেডিয়েটর থেকে বাষ্প নির্গমন; Image Source: cartoq.com
সমস্যা
রেডিয়েটর গাড়ির কুলিং সিস্টেমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু থার্মোস্টাট নষ্ট হয়ে গেলে, রেডিয়েটিরের হোজ পাইপ ও রেডিয়েটর ছিদ্র হয়ে গেলে, মরিচা কিংবা পানির সাথে মিশ্রিত অপদ্রব্য রেডিয়েটরের ক্ষতি সাধন করে। এছাড়া কুলিং ওয়াটার পাম্প ও পানির লেভেল কমে গেলেও রেডিয়েটরের সিস্টেম ঠিকমতো কাজ করে না।
সমাধান
১। থার্মোস্টেট চেক করা। প্রয়োজনে পরিবর্তন করা।
২। রেডিয়টরের ছিদ্র ও হোস পাইপের ছিদ্র আছে কিনা যাচাই করে নেয়া কিছুদিন পরপর।
৩। পানির লেভেল কমে গেলে পর্যাপ্ত পানি দিয়ে লেভেল সমান রাখা।
৪। মরিচা কিংবা পানির সাথে অপদ্রব্য যাতে রেডিয়টরের ক্ষতি না করে সেজন্য রেডিয়েটর পরিষ্কার রাখা এবং পানির ফিল্টার চেক করা।
৩. ফ্ল্যাট টায়ার বা ক্ষতিগ্রস্ত চাকা

চাকা পাংচার; Image Source: dealnews.com
সমস্যা
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অসতর্কতার সাথে গাড়ি চালালে গাড়ির চাকা বেশি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। এছাড়া রাস্তার অবস্থার উপরও গাড়ির চাকার জীবনকাল নির্ভর করে।
সমাধান
কখন একটি চাকা পাংচার হয়ে যাবে সেটা ভবিষ্যদ্বাণী করা প্রায় অসম্ভব। তবে ভ্রমণের সময় গাড়িতে সবসময় অতিরিক্ত চাকা রাখা উচিত। সেটি যে দূরত্বেই ড্রাইভিং করা হোক না কেন। উপরন্তু একটি রেঞ্চ, জ্যাক এবং জ্যাক স্ট্যান্ড মতো টায়ার পরিবর্তন করার সরঞ্জাম সব ঠিকঠাক আছে কিনা তা নিশ্চিত করুন।
৪. গাড়ীর দরজা বন্ধ হওয়া

দরজা লক অবস্থায় ভেতরে গাড়ির চাবি; Image Source: towing-concord.com
সমস্যা
গাড়ি লক হয়ে যাওয়ার চেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয় কী হতে? বিভিন্নভাবে এটি ঘটতে পারে, গাড়ির চাবি ভুল পথে ফেলে বা গাড়ীর অভ্যন্তরে রেখে যাওয়া এবং গাড়িটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে লক হয়ে যায়। বেশ তাড়াহুড়ো কিংবা অন্যমনস্ক থাকলে এই ঘটনাটি অহরহ হতে পারে।
সমাধান
একটি অতিরিক্ত চাবি নিজের কাছে রাখা। অতিরিক্ত চাবি না থাকলে সেক্ষত্রে গাড়ি লক খোলার জন্য দ্রুত গাড়ির মিস্ত্রির সাহায্য নিতে হবে।
৫. অল্টারনেটর

বেল্ট পুলির সাথে অল্টারনেটর সংযোগ; Image Source: howstuff.com
সমস্যা
১। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গাড়ির ড্রাইভাররা অল্টারনেটর নষ্ট হয়েছে কিনা বুঝতে পারে গাড়ির মন্থর বা ঝলসানি লাইট দেখে।
২। অল্টারনেটর ঠিকমতো কাজ না করলে অভ্যন্তরীণ বিয়ারিং ক্ষয় হয় এবং গর্জনের মতো করে শব্দ তৈরি করতে থাকে।
৩। ইঞ্জিন চালু হতেও বেশ সময় নেয় অথবা ইঞ্জিন ক্র্যাঙ্ক ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। এগুলোও অল্টারনেটর ঠিকমতো কাজ না করার লক্ষণ।
৪। সাধারণত, চার্জিং সিস্টেমে কোন সমস্যার সম্মুখীন হলে তা প্রথমত ড্রাইভিং করার সময় গাড়ির ড্যাশবোর্ডে ব্যাটারি, ALT বা CHARGE এর প্লেটে সতর্কতার আলো জ্বলে ওঠে। এর মানে হলো, কোনো কারণে অল্টারনেটর ব্যাটারির চার্জ বন্ধ করে দিয়েছে এবং আপনার গাড়িটি ব্যাটারির চার্জে চলছে। কিন্তু মনে রাখবেন সতর্কতার বাতি সবসময় একটি খারাপ কিছু বুঝায় তা না; মাঝে মাঝে ভুল বার্তাও প্রদান করে যদি কোন সেন্সর দ্বারা ট্রিগার হয়ে থাকে।
সমাধান
১। আপনার যদি একটি “চেক ইঞ্জিন” বাতি থাকে, তাহলে ডায়াগনস্টিক পোর্টে একটি কোড পাঠক সংযুক্ত করুন। যদি আপনি P0562 (সিস্টেম ভোল্টেজকে ইঙ্গিত করে) কোডটি খুঁজে পান তবে খুব সম্ভবত অল্টারনেটর নষ্ট হয়েছে কিনা পর্যবেক্ষণ করে নিতে পারেন (কোডগুলি যানবাহন / মডেল / গাড়ির ইয়ার ভার্সনের উপর ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে)। এভাবে চেক করে দেখতে পারেন অল্টারনেটর ঠিক আছে কিনা।
২। গাড়ির চালু করার চাবি দিয়ে গাড়ি চালু করার পর এক্সিলারেটর চাপ দিয়ে যদি গাড়ির সামনের বাতিগুলো জ্বালিয়ে দিলে যদি অনুজ্জ্বল ভাবে জ্বলতে দেখা যায়, তাহলে বুঝতে হবে অল্টারনেটর পরিবর্তন করতে হবে।
৩। গাড়িতে যদি সতর্কতার বাতি যদি না থাকে সেক্ষেত্রে, গাড়ির হুড খুলে ইঞ্জিনের বেল্টগুলো ভালোভাবে দেখে নিতে হবে। দেখার পর যদি বেল্টটি আলগা হয়ে থাকে কিছুটা অথবা তাপের কারণে যদি বেল্টের কিছু কিছু যায়গা পোড়া পোড়া মনে হয়, এটি হয়ে থাকে ঘর্ষণের কারণে। তাহলে বুঝতে হবে বেল্টটি বেশ আলগা হয়ে লেগে কাজ করছিলো, এটাও অল্টারনেটর যে ঠিকভাবে কাজ করছে না তা বোঝার উপায়। সেক্ষেত্রে অল্টারনেটর প্রয়োজন বুঝে মেরামত অথবা নতুনভাবে কিনে সংযোজন করে নিতে হবে।











